সাতক্ষীরার তালা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখল, সেমাই কারখানা দখল এবং চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা শনিবার (৩০ আগস্ট) জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার (২২ আগস্ট) শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির পক্ষ থেকেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম তালা সদরের আটারই গ্রামের মৃত আক্কাজ আলী মোড়লের ছেলে। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের তরুণ কান্তি চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, বিএনপির শুরু থেকেই তিনি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জিয়াউর রহমানের সঙ্গেও একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। অথচ দলেরই একজন নেতা রফিকুল ইসলাম সন্ত্রাসী কায়দায় তার জমি দখল করেছেন। জমিতে গেলে দেশ ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়। থানায় অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি। এখন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রতিপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে তার জমির ফসলও নষ্ট করা হয়েছে।
শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহর হাসান বলেন, ২০২২ সালে আটারই গ্রামে সেমাই কারখানা স্থাপন করা হয়। সব নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালিত হলেও সম্প্রতি রফিকুল ইসলাম রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফ্যাক্টরিটি দখলের চেষ্টা করছেন। তিনি ৪৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে গত ১৩ জুলাই কারখানায় প্রবেশ করে উৎপাদন বন্ধ করে দেন, ভাঙচুর চালান এবং মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ ও কল রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে। রফিকুল ইসলাম হুমকি দিয়েছেন চাঁদা না দিলে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হবে। ফলে প্রায় ৩০ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
কারখানার নৈশ্যপ্রহরী হযরত আলী অভিযোগ করেন, রফিকুল ইসলাম দাবি করেছেন এখানে তারও জমি রয়েছে। টাকা না দিলে কোম্পানি চালাতে দেওয়া হবে না। মোবাইলে তাকে একাধিকবার হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। সেই কল রেকর্ড কোম্পানির কাছে জমা দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল বানিয়ে রফিকুল ইসলাম নানা অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। থানায় ও উপজেলা বিএনপির কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রফিকুল ইসলাম বলেন, হিন্দু পরিবারের জমি দখলের বিষয়টি মিথ্যা। তবে শপিং ভ্যালি কারখানার জায়গায় তারও অংশ রয়েছে। “যাই হোক জমি আমি ছাড়ব না,” বলেন তিনি।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও তদন্ত কমিটির সদস্য মহাসীন আলম বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ গোটা সংগঠনের জন্য গুরুতর ইঙ্গিত বহন করছে।